আপনারা কেমন আছেন সকলে? আশা করি ভাল আছেন। আমি আজ আপনাদের জন্য নিয়ে এসেছি ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য বিশেষ একটি খাদ্যতালিকা। ডেঙ্গু জ্বর একটি মশাবাহিত ভাইরাল সংক্রমণ যা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিদ্যমান। এই ভাইরাসটি এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা, বমি বমি ভাব এবং বমি। ডেঙ্গু জ্বরের কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই, তবে উপসর্গগুলির চিকিৎসা করা যেতে পারে। ডেঙ্গু জ্বরের চিকিৎসায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই ব্লগ পোস্টে, আমি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের জন্য একটি বিস্তারিত খাদ্যতালিকা শেয়ার করব। এই খাদ্যতালিকাটি আপনাকে ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলি দ্রুত সেরে উঠতে এবং আপনার সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করবে। তাই যদি আপনি ডেঙ্গু জ্বরে ভুগছেন, তাহলে দয়া করে এই ব্লগ পোস্টটি পড়ুন এবং আমার দ্বারা দেওয়া খাদ্যতালিকাটি অনুসরণ করুন।

ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্য ডায়েট চার্ট

ডেঙ্গু আক্রান্ত হলে শরীরে প্লেটলেট কমে যায় এবং রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা থাকে। সুস্থ হতে এসময় সুষম খাদ্যাভাস খুবই জরুরি। ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর খাদ্যাভাসে থাকা উচিত প্রচুর তরল পানীয় যেমন স্যালাইন, ডাবের পানি, জুস ইত্যাদি। পাতলা স্যুপ, ডাল, শাকসবজি খেতে পারেন। পেটে হজমের সমস্যা না থাকলে সাদা ভাত খেতে পারেন। কলা, পেয়ারা, নাশপাতি, আপেল ইত্যাদি ফল খেতে পারেন। খাবার এড়িয়ে চলা উচিত চর্বিযুক্ত খাবার, তেল-মশলাদার খাবার, কাঁচা সবজি, সাইট্রাস ফল (যেমন কমলা, মাল্টা), দুধ ও দুধজাত পণ্য।

খাবারে উচ্চ ক্যালোরি, প্রোটিন এবং ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা

ডেঙ্গু রোগীদের খাবারের চার্ট: সেরে উঠার জন্য পুষ্টিকর খাবার

ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীর খুব দুর্বল হয়ে পড়ে। এই সময় শরীরকে সুস্থ করার জন্য প্রয়োজন যথেষ্ট পুষ্টি। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পুষ্টিবিদরা একটি বিশেষ খাবারের চার্ট তৈরি করেছেন। এই চার্ট অনুযায়ী ডেঙ্গু আক্রান্তদের খাওয়া উচিত-

  • ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবার: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তদের অনেক ক্যালোরি প্রয়োজন। কারণ, এই সময় শরীর অনেক শক্তি হারায়। তাই ডেঙ্গু রোগীদের খাবারে রাখতে হবে চাল, আলু, রুটি, ডাল, মাংস, মাছ ইত্যাদি।
  • প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার: প্রোটিন শরীরের কোষ ও টিস্যু তৈরিতে সাহায্য করে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শরীরে প্রোটিনের ঘাটতি হয়। তাই ডেঙ্গু রোগীদের ডায়েটে রাখতে হবে মাংস, মাছ, ডিম, দুধ, দই ইত্যাদি।
  • ভিটামিন সমৃদ্ধ খাবার: ভিটামিন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ডেঙ্গু জ্বর হলে শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হয়। তাই ডেঙ্গু রোগীদের খাবারে রাখতে হবে ফল, সবজি, দুধ ইত্যাদি।
  • তরল পদার্থ: ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে শরীরে তরল পদার্থের ঘাটতি হয়। তাই ডেঙ্গু রোগীদের প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ পান করতে হবে। যেমন, পানি, ফলের রস, লবণপানি ইত্যাদি।

এই খাবারের চার্ট অনুযায়ী খেলে ডেঙ্গু রোগীরা দ্রুত সুস্থ হতে পারবেন। তবে, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

খাবারে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার যোগ করা

ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ডেঙ্গু জ্বরের সময় শরীরে প্লাটিলেটের ঘাটতি হয়। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং প্লাটিলেটের ঘাটতি পূরণ করতে পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।

ফলমূল, সবজি এবং শস্যজাত খাবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ক্ষতিকারক ফ্রি রেডিকেলের বিরুদ্ধে লড়াই করে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য আপেল, কলা, ব্লুবেরি, ব্রকলি, পালং শাক, টমেটো এবং গাজরের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া ভালো। এই খাবারগুলো শরীরের প্রদাহ কমাতে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।

এছাড়াও, ডেঙ্গু রোগীদের প্রচুর তরল খাওয়া উচিত। তরল পদার্থ শরীরকে হাইড্রেটেড রাখতে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। পানি, ডাবের পানি, ফলের রস এবং স্যুপের মতো তরল খাবার ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ভালো।

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য নিরাপদ খাবারের তালিকা

যখন আমরা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হই তখন আমাদের শরীর দুর্বল ও নিরুদ্রেগ হয়ে পড়ে। এই সময় আমাদের খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকা খুবই জরুরী। ডেঙ্গুর সময় শরীরে পানির ঘাটতি হয়, রক্তে প্লেটলেট কমে যায়। তাই এই সময় পানীয় এবং পাতলা তরল খাবার বেশি খাওয়া উচিত। নিচে দেওয়া হলোঃ

১। তরল পদার্থঃ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল বেরিয়ে যায়। তাই রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে হবে। পানি, ডাবের পানি, টক দই, শরবত, স্যুপ, ডাবের জুস ইত্যাদি খেতে পারেন।

২। নরম খাবারঃ রোগীর পরিপাকতন্ত্র দুর্বল হয়ে যায়। তাই হজমে হওয়া কঠিন খাবার খাওয়া উচিত নয়। এই সময় নরম খাবার খাওয়া ভালো। যেমনঃ মুড়ি-ভাত, ডিমের সাদা অংশ, চায়ের রুটি, শিশুর খাবার ইত্যাদি।

৩। ফলমূলঃ ফলমূলে প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ থাকে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ফল খাওয়া খুবই উপকারী। কলা, পেয়ারা, আপেল, পেঁপে, আনারস ইত্যাদি ফল খেতে পারেন।

৪। সব্জিঃ সব্জিতেও প্রচুর ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ থাকে। তবে ডেঙ্গুর সময় কাঁচা সব্জি খাওয়া উচিত নয়। সব্জিগুলোকে ভালোভাবে রান্না করে খাবেন। যেমনঃ লাউ শাক, পালং শাক, ঝিঙে শাক, বেগুন ভর্তা ইত্যাদি।

৫। মাংস ও মাছঃ প্রোটিন শরীরের জন্য খুবই জরুরী। তাই ডেঙ্গু রোগীদের উচিত মাংস ও মাছ খাওয়া। তবে অতিরিক্ত মসলাযুক্ত মাংস বা মাছ খাওয়া উচিত নয়। এছাড়াও ডিম, দুধ ও দুগ্ধজাত খাবারও খেতে পারেন। কিছু দিন পর যখন শরীর সুস্থ হয়ে উঠবে তখন স্বাভাবিক খাবার খেতে পারবেন।

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বাদ দেওয়া উচিত খাবারসমূহ

ডেঙ্গুরোগে আক্রান্ত হলে শরীরে প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায়। তাই এমন সব খাবার খেতে হবে যা প্লাটিলেট বাড়ায়। তবে কিছু খাবার আছে যা ডেঙ্গুরোগীদের জন্য একেবারেই উপকারী নয়। সেগুলো হলো-

  • আনারস: আনারসে এনজাইম থাকে যা প্লাটিলেটের সংখ্যা কমায়।
  • পেঁপে: পেঁপেতেও প্লাটিলেট কমে যাওয়ার এনজাইম থাকে।
  • কিশমিশ: কিশমিশ রক্তের শর্করার মাত্রা বাড়ায়, যা ডেঙ্গুরোগীদের জন্য ভালো নয়।
  • সয়াবিন: সয়াবিনে ফাইটেট থাকে যা শরীরে আয়রনের শোষণ কমায়।
  • ক্যাফিনযুক্ত পানীয়: কফি, চা ইত্যাদি ক্যাফিনযুক্ত পানীয় ডিহাইড্রেশনের কারণ হতে পারে, যা ডেঙ্গুরোগীদের জন্য ভালো নয়।

ডেঙ্গু রোগীদের জন্য হাইড্রেশনের গুরুত্ব

ডেঙ্গু একটি মশাবাহিত ভাইরাল রোগ যা গুরুতর জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত হাইড্রেশন নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই রোগটি প্রায়ই ডিহাইড্রেশনের কারণ হয়। ডেঙ্গু ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর রক্তনালীকে লক্ষ্য করে, যা রক্তনালী ফুঁড়ে যাওয়া এবং রক্তক্ষরণ হওয়ার কারণ হতে পারে। এটি রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং ডিহাইড্রেশনের দিকে পরিচালিত করে। এমনকি মৃদু ডেঙ্গু রোগীদেরও প্রচুর পরিমাণে তরল পান করা উচিত, যেমন পানি, ওআরএস লবণ, নারকেল পানি এবং ফলের রস। গুরুতর ডেঙ্গু রোগীদের অন্তঃসত্ত্বা বা অন্তঃসত্ত্বা হতে পারে, তাই তাদের তরল সরবরাহ বজায় রাখার জন্য ইন্ট্রাভেনাস তরল প্রয়োজন হতে পারে। ডেঙ্গু রোগীদের তাদের শরীরের তরল স্তর পুনরুদ্ধার করতে এবং জটিলতা প্রতিরোধে সাহায্য করার জন্য পর্যাপ্ত তরল পান করা নিশ্চিত করা উচিত।

Similar Posts